আরির উৎপত্তি
আরি এমব্রয়ডারির উৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যায় ১২শ শতাব্দীতে, ভারতের গুজরাট রাজ্যের চামড়া শিল্পীদের মধ্যে। প্রথমে এই টেকনিক ব্যবহার করা হতো সাজানো জুতো বানানোর জন্য। পরবর্তীতে, মুঘল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় আরি এমব্রয়ডারি সূক্ষ্ম সিল্ক ও সুতি কাপড়ে করা হতে থাকে, এবং শুধুমাত্র পুরুষ শিল্পীরাই এই কাজ করতেন। চীন ও ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যের মাধ্যমে আরি ডিজাইনে নতুন প্রভাব আসে। ১৭শ শতাব্দীর রাজকীয় পোশাকগুলিতে প্রাচ্যের ল্যান্ডস্কেপ এবং ইউরোপের ফুলের মোটিফ (যেমন ড্যাফোডিল ও আইরিস) দেখা যায়, যা আরি টেকনিক দিয়ে তৈরি।

আরি এমব্রয়ডারি কী?
আরি নামটি এসেছে ‘আর’ থেকে, যা একটি বাঁকা সুচ বা অ্যাওল। প্রথমে, পাতলা বা স্বচ্ছ কাগজে একজন দক্ষ শিল্পী নকশা আঁকেন। তারপর, নকশার রেখা বরাবর ছোট ছোট ছিদ্র করা হয় এবং কাপড়ের ওপর কাগজটি রাখা হয়। একটি বিশেষ গুঁড়ো কাগজের ওপর ঘষে ছিদ্র দিয়ে কাপড়ে ফুটকি আকারে নকশার রূপরেখা ফেলা হয়। এরপর কাপড়টি কাঠের ফ্রেমে টেনে বাঁধা হয়, যাতে এমব্রয়ডারি শুরু করা যায়।
ধৈর্য ও নিখুঁততা: আরি টেকনিক
আরি সুচ কাপড়ের ওপর থেকে চালানো হয়, কিন্তু সিল্কের সুতা নিচ থেকে যোগ করা হয়। শিল্পীরা মেঝেতে বসে এক হাতে সুচ চালান এবং অন্য হাতে সুতা ধরে রাখেন। তারা দ্রুত গতিতে লুপ তৈরি করে চেইন স্টিচের অত্যন্ত সূক্ষ্ম রেখা বানান। আরি এমব্রয়ডারিতে ঝলমলে ইফেক্টের জন্য মোতি, পাথর বা জরির থ্রেড (সোনা, রুপা ও তামার) ব্যবহার করা হয়, যা মুঘল আমলের জাঁকজমক মনে করিয়ে দেয়।
শিল্পীর দক্ষতা
আরি টেকনিকের জন্য অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, ধৈর্য এবং নিখুঁততা প্রয়োজন। শিল্পীদেরকে নকশার সূক্ষ্ম রেখা অনুসরণ করতে হয়, পাশাপাশি রঙের গ্রেডেশনও ঠিক রাখতে হয়। তাদের প্রতিটি স্টিচ একই সাইজ ও সঠিক জায়গায় করতে হয়, যাতে শেষ পর্যন্ত নকশাটি নিখুঁত ও সুন্দর দেখায়।
ভারানা তাদের কালেকশনে আরি টেকনিক ব্যবহার করে। ঐতিহ্যগতভাবে আরি জটিল ও বিস্তারিত নকশার জন্য ব্যবহৃত হলেও, ভারানা একে সহজ ও মিনিমালিস্টিকভাবে উপস্থাপন করে, যাতে প্রতিটি স্টিচের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
এই শিল্পটি শুধু পোশাক নয়, শিল্পের এক উচ্চমার্গীয় রূপ, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে।