সালোয়ার কামিজ, যাকে আপনি সালোয়ার স্যুট, পাঞ্জাবি স্যুট বা শালওয়ার কামিজ নামেই চিনুন না কেন, এটি ভারতীয় নারীদের ফ্যাশনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় পোশাক। এই পোশাকটির সময়ের সঙ্গে বিবর্তনের গল্পই আজ আমরা জানবো।

সালোয়ার কামিজের উৎপত্তি
সালোয়ার কামিজ ভারতের উত্তরাঞ্চল ও কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তবে এটি সমগ্র ভারতজুড়ে জনপ্রিয়। যদিও নারীরা এটি বেশি পরেন, পুরুষরাও এই পোশাক পরিধান করেন। সালোয়ার কামিজ মূলত দুটি অংশে গঠিত—একটি লম্বা শার্ট বা কামিজ এবং একটি পায়জামা, যা প্রশস্ত, আঁটসাঁট বা ঢিলেঢালা হতে পারে। অনেক সময় এটি ডুপাট্টা (ওড়না বা স্কার্ফ) এর সঙ্গে পরা হয়।
এই পোশাকটি ভারতে এসেছিল মুসলিম শাসনামলে, প্রায় ১২শ শতাব্দীতে। মুঘল সাম্রাজ্যের সময় (১৬শ থেকে ১৮শ শতাব্দী) এটি আরও জনপ্রিয় হয়। কথিত আছে, মুঘল দরবারের নর্তকীরা যে আনারকলি স্যুট পরতেন, সেটিই ছিল সালোয়ার কামিজের প্রাচীনতম রূপ। এই পোশাক পরে আনারকলি নামে পরিচিত হয় মুঘল যুগের বিখ্যাত নর্তকী আনারকলির নামানুসারে।

আনারকলি ড্রেস
আধুনিক সালোয়ার কামিজের স্টাইল ও ডিজাইন
আজকের সালোয়ার কামিজ মুঘল যুগের মুজরা ড্রেস থেকে অনেক দূর এগিয়েছে। এখন এটি বিভিন্ন দৈর্ঘ্য, আকার, স্টাইল ও ডিজাইনে পাওয়া যায়, তবে এর ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য এখনও অটুট। সালোয়ার কামিজের বিবর্তনে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের ডিজাইন, যেমন:
- আনারকলি স্যুট: লম্বা, ফ্লাউনিং, ফ্রক-স্টাইলের কামিজ, যা সালোয়ার বা চুরিদারের সঙ্গে পরা হয়।
- পাটিয়ালা স্যুট: হাঁটু পর্যন্ত লম্বার কামিজ এবং প্রচণ্ড ঢিলেঢালা প্লিটেড সালোয়ার।
- শারারা: লেহেঙ্গার মতো দেখতে, যেখানে পায়জামাটি হাঁটু থেকে নিচে ফ্লেয়ার্ড ও প্রশস্ত হয়।
- ঘারারা: ছোট কামিজ এবং হাঁটু পর্যন্ত আঁটসাঁট, তারপর নিচে ফ্লেয়ার্ড পায়জামা।
- প্যালাজ্জো সালোয়ার: পশ্চিমা স্টাইলের লুজ প্যান্টের সঙ্গে কামিজের কম্বিনেশন।
সালোয়ার কামিজের জনপ্রিয়তা
সালোয়ার কামিজ শুধু ভারতেই নয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানেও সমান জনপ্রিয়। আজও ডিজাইনাররা নতুন নতুন স্টাইল নিয়ে আসছেন, যা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে তৈরি।
এই পোশাকের বিবর্তন শুধু ফ্যাশনের ইতিহাসই নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। সালোয়ার কামিজ আজও নারীদের হৃদয়ে রাজত্ব করছে তার নান্দনিকতা ও আরামদায়ক পরিধানের জন্য।