বাংলাদেশের ফ্যাশন জগৎ ক্রমাগত সমৃদ্ধি অর্জন করছে, যেখানে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আধুনিক ডিজাইনের সাথে মেলানো হচ্ছে। এই প্রবন্ধে বাংলাদেশের সেরা ১০ জন ফ্যাশন ডিজাইনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ফ্যাশনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলাদেশের ১০ জন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার:
১. বিবি রাসেল
২. মাহিন খান
৩. আয়েশা আবেদ
৪. তাসমিম জোবায়ের
৫. আয়ধা মেহনাজ
৬. আফসানা ফেরদৌসী
৭. রোকাইয়া আহমেদ পূর্ণা
৮. ফারজানা শাকিল
৯. সানায়া কুতুর
১০. শিমুল খালেদ
বিবি রাসেল:
বিবি রাসেল একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী মডেল ও ডিজাইনার। তিনি ১৯৯৪ সালে বিবি প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশীয় হস্তশিল্প, খাদি, গামছা ও মসলিন কাপড়কে আধুনিক ডিজাইনের সাথে মিশিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। তার ডিজাইন বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরে।
এই ডিজাইনাররা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেছেন।
২. মাহিন খান
বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে একজন অগ্রদূত, মাহিন খান পাঁচ দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে মায়াসির নামের বিখ্যাত ফ্যাশন লেবেল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর নকশায় ঐতিহ্যবাহী মোটিফ ও জটিল এমব্রয়ডারির সাথে আধুনিকতার মিশেল দেখা যায়। তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে পোশাক ডিজাইনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং বাংলাদেশের টেক্সটাইল ঐতিহ্য সংরক্ষণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
৩. আয়েশা আবেদ
আয়েশা আবেদ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আরং-এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্র্যান্ড গ্রামীণ কারিগর, বিশেষত নারী শিল্পীদের ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় শিল্পকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার জন্য পরিচিত। আরং ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক পোশাক, অ্যাকসেসরিজ এবং হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত।
৪. তাসমিম জোবায়ের
১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া তাসমিম জোবায়ের আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছেন। ১৫ বছর বয়সে দার্জিলিংয়ে ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ২০১৮ সালে দুবাইতে তাঁর প্রথম বুটিক প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন উইক এবং প্যারিস ফ্যাশন উইকে তাঁর “স্প্রিং সামার ২০২৩” কালেকশন প্রশংসা পায়। প্রকৃতি ও শিল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ইউরোপ ও এশিয়ায় তাঁর প্রভাব বিস্তার করছেন।
৫. আয়ধা মেহনাজ
ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ড মুগলারের মিডিয়া রিলেশনস ম্যানেজার আয়ধা মেহনাজ ফোর্বসের ৩০ আন্ডার ৩০ ইউরোপ ২০২৪ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠা আয়ধা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়লেও ফ্যাশনের টানে প্যারিসের ইসমোডে পড়াশোনা করেন। তিনি বিয়ন্সে, কাইলি জেনার এবং জেন্ডায়ার মতো তারকাদের সাথে কাজ করেছেন এবং মুগলারের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মডেস্ট ফ্যাশন ও দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধিত্বের পক্ষে তাঁর কাজও প্রশংসিত।
৬. আফসানা ফেরদৌসী
বাংলাদেশের সাসটেইনেবল ফ্যাশনের অগ্রদূত আফসানা ফেরদৌসী ১২ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন ডিজাইনার। ২০১৪ সালে তিনি নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ফেরদৌসী বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন কম্পিটিশনে জাজ হিসেবেও কাজ করেন। তাঁর ডিজাইনে ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও আধুনিকতার মিশ্রণ দেখা যায়, যেখানে পরিবেশবান্ধব ও নৈতিক ফ্যাশনের উপর জোর দেওয়া হয়।
৭. রোকাইয়া আহমেদ পুর্ণা
স্থানীয় ফ্যাব্রিক ও সাংস্কৃতিক মোটিফ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া জাগানো ডিজাইনার রোকাইয়া আহমেদ পুর্ণ। তাঁর ব্র্যান্ড RAP টেকসই ফ্যাশন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। জার্মান ব্র্যান্ড একন ফুটওয়েয়ারের সাথে তাঁর কলaborationে তৈরি হয় ‘কামথালা’ স্নিকার, যা রিসাইকেল্ড ম্যাটেরিয়াল থেকে তৈরি এবং বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল থেকে অনুপ্রাণিত। ২০১৯ সালে রাশিয়ার ফ্যাশন উইকে অংশগ্রহণ করে তিনি দক্ষিণ এশীয় ফ্যাশনে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন।
ফারজানা শাকিল একজন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার এবং মেকআপ আর্টিস্ট। তার প্রতিষ্ঠান Farzana Shakil Makeover Salon সেলিব্রিটিদের পছন্দের জায়গা। তার নকশায় সুন্দর এমব্রয়ডারি ও গুণগত মানের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
সানায়া কুতুর একটি লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড, যা বিয়ের ও সান্ধ্য পোশাকের জন্য বিখ্যাত। তাদের নকশায় পরিশীলিত কারুকাজ ও মূল্যবান ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা হয়।
শিমুল খালেদ (১৯৬৩-২০২০) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার লেবেল চারু চট্টগ্রাম এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক ডিজাইনের মিশ্রণ ঘটান। তিনি চলচ্চিত্রের পোশাক ডিজাইন করতেন এবং চট্টগ্রামে ফ্যাশন শো প্রসারে ভূমিকা রাখেন।
উপসংহার:
এই ডিজাইনাররা বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পকে সমৃদ্ধ করছেন, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে। তাদের কাজ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে।